ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘাত যখন প্রকট রূপ নিয়েছে, তখন উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালনের কথা জানিয়েছে চীন, যা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।
কিন্তু এই মধ্যস্থতার মাধ্যমে চীন যেসব লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সেক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই গত সপ্তাহ শেষে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ইসরায়েল-হামাসের সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি ওই বৈঠক করেছেন এমন সময় যখন এই সংঘাত আঞ্চলিক একটি বড় যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা এক্ষেত্রে একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য চীনের সাথে কাজ করবে।
চীনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত ঝাই জুন আরব নেতাদের সাথে দেখা করতে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার পর মি. ওয়াং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছেন।
মি. ওয়াং জাতিসংঘের বৈঠকেগুলোয় ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সোচ্চার ভূমিকা রেখেছিলেন।
আশা করা হচ্ছিল যে, আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমন করতে ইরানের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে চীন। ইরান গাজায় হামাস আর লেবাননে হেজবুল্লাহকে সমর্থন করে থাকে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা দৃশ্যত মি. ওয়াংকে ইরানিদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে তোলার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
চীন ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এই বছরের শুরুতে অভাবনীয়ভাবে বেইজিং দুই বৈরি দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক সহজ করতে মধ্যস্থতা করেছিল।
তেহরান বলেছে যে তারা গাজার পরিস্থিতি সমাধানে “চীনের সাথে যোগাযোগ আরও জোরদার করতে প্রস্তুত” রয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অধীনস্থ ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের চীনা পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডন মারফি বলেছেন, “যেহেতু সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে চীনা সরকারের তুলনামূলকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তাই চীনকে সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।”
বিশেষ করে ফিলিস্তিন, আরব, তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে চীনের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
“যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আবার ইসরায়েলের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে সাথে নিয়ে চীন সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে,”তিনি বলেন।
তবে অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা মনে করেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে চীন তেমন শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবে না।
“চীন এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বা প্রভাবশালী কোন দেশ নয়। এই অঞ্চলের মানুষের সাথে কথা বলে, চীন কোন সমাধান আনতে পারবে বা সমাধানে অবদান রাখতে পারবে তা কেউই আশা করে না,” এমনটাই মনে করেন, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং মধ্যপ্রাচ্য ও চীন সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ জোনাথন ফুলটন।
সংঘাতের বিষয়ে চীনের প্রথম বিবৃতি ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করেছিল এবং তারা সেজন্য “গভীর হতাশা” প্রকাশ করেছিল যে, চীনের বিবৃতিতে হামাসের কোন নিন্দা করা হয়নি বা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
হামাসের বন্দুকধারীরা গত ৭ই অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের উপর একটি নজিরবিহীন আক্রমণ করে। এতে ১৪শ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন এবং কমপক্ষে ২৩৯ জনকে জিম্মি করা হয়।