০৮:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কোরবানি একমাত্র আল্লাহর জন্য

কোরবানির পশুর ছবি ফেইসবুকে পোস্ট রিয়ার অন্তর্ভুক্ত,লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহ পছন্দ করেনা

  • Md Rasel Mia
  • সময়ঃ ০২:২১:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪
  • ৭৭ সময়

oppo_32

স্টাফ রিপোর্টার :কোরবানি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। এই মহান ইবাদত নষ্ট হতে পারে সামান্য ভুলে। এমনই একটি ভুল হচ্ছে ফেসবুকে কোরবানির পশুর ছবি শেয়ার করা। যা মূলত রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে রিয়া বলা হয় লোক দেখানো আমলকে। প্রিয়নবী (স.) রিয়াকে ছোট শিরক বলেও অভিহিত করেছেন।

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো বিষয়ে ততটা ভীত নই।’ সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা। আল্লাহ কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৫২৮)

অনুমোদনহীন পশুর হাট বসানোয় ১৬ ব্যবসায়ীকে পৌনে ১ লাখ টাকা জরিমানা করলেন ঢাদসিক

আল্লাহর  দরবারে কোনো ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য প্রথম শর্তই হচ্ছে ইখলাস। ইখলাস ছাড়া এবং শিরক থাকলে ইবাদত কবুল হয় না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা শিরক থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে অংশীদার না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)

ঈদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে আনন্দঘন ছবির পাশাপাশি অনেকেই প্রকাশ করছেন কোরবানির পশু কেনা, জবাই, কাটাসহ এ সংক্রান্ত নানা ধরণের ছবি। রক্তাক্ত পশুর ছবি সহ কোরবানির পশুর ছবি প্রকাশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বির্তক। অনেকেই এসব ছবি প্রকাশে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, আবার কেউ কেউ এর পক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছেন। ধর্মীয় এই উৎসবে

কোরবানির পশু জবাই বা এ সংক্রান্ত ছবি প্রকাশে ধর্ম দৃষ্টিকোণ থেকে আজকের ঢাকাকে বলেছেন দেশের প্রখ্যাত আলেমরা।

এ প্রসঙ্গে  বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হাফেজ মাওলানা মোঃ আনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, মৌলিক ভাবে ধর্মের বিধান পালন মানেই হচ্ছে আল্লাহমুখী হওয়া। তাকওয়ার সাধনায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। ফেসবুকে ছবি প্রকাশ বা অন্য যে কোন সামাজিক মাধ্যমে  ই হোক নিজের কৃতিত্ব জাহির মৌলিকভাবে ধর্মীয় চেতনা বহির্ভূত। কোরবানি একটি ইবাদত। এই ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের বাহাদুরি প্রকাশ, ফূর্তি বা বিকৃত মনোভাব প্রকাশ ইসলামি চেতনাবিরোধী বিষয়। কোরবানির পশু জবাই কিংবা কোরবানি পশু নিয়ে ফেসবুকে বা অন্য কোনও ভাবে বাহাদুরি, অহেতুক ফূর্তি পরিহার করা উচিত। সব চেয়ে বড় কথা ইসলামে অপ্রয়োজনে ছবি তোলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশির কষ্ট হয় এমন কোনও কাজ বৈধ হলেও আড়ালে করতে বলা হয়েছে শরিয়তে। ধরুন, আপনি ফল  কিনছেন বাজার থেকে, কিন্তু সেই ফল প্রতিবেশিকে দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় আপনার প্রতিবেশি মুসলমান কি হিন্দু যেই হোন, যদি মনে করেন এ ফলের উচ্ছিষ্ট দেখে তিনি নিজ সন্তানকে তা কিনে না দিতে পেরে আফসোস করবেন, সেক্ষেত্রে এমন স্থানে ওসব ফেলতে পারেন না যা দেখে তিনি হীনমন্যতায় ‍ভুগতে পারেন। এমনটাই বলা হয়েছে শরিয়তে। কোরবানির ক্ষেত্র এ বিষয়টি মুসলমানদের বিবেচনা করা উচিত।

বরিশালের হিজলা উপজেলার কাউরিয়া কেরা মতিয়া রাবিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহম্মদ হাবিবউল্লাহ বলেন, ‘এক কথায় বলবো, অপ্রয়োজনে মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণির ছবি তোলা বা প্রকাশ করা ইসলামে নিরুৎসাহিত। কোরবানির পশুর বিকৃত ছবি হোক আর স্বাভাবিক ছবি হোক, ফেসবুকে বা অন্য কোনও মাধ্যমে অপ্রয়োজনে প্রকাশ শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় কাজ নয়। ’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন , ‘মৃত পশুর ওপর উঠে সেলফি তোলা, এসবের সাথে আমাদের সমাজ পরিচিত না। এটা বিকৃত মানসিকতার কাজ। কিন্তু উপহাস বা বিকৃতি ছাড়া সাধারণ ভাবে পশু জবাই করার বা মাংস কাটার ছবি বাংলাদেশ জন্য সমস্যা নয় বলে আমি মনে করি। এটা তো স্বাভাবিকভাবে মানুষজন বাস্তবে দেখে। পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। তবে রক্তের ছবি অনেকে সহ্য করতে পারেন না, এটা শুধু কোরবানি ক্ষেত্রে নয়, মারামারি বা অন্য দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও হতে পারে।

রাজধানীর বড় কাটরা মাদ্রসার শিক্ষক মাওলানা আনসারুল হক ইমরান বলেন ‘অনেকেই বলেন ঈদ মানে আনন্দ, কিন্তু কিসের আনন্দ ? আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ ভাবে উপার্জিত অর্থের দিয়ে পশু কেনা, সঠিক পদ্ধতিতে জবাই করে মাংস খাওয়া, গরিব-দুস্থদের  জন্য মাংস বণ্টন করা,
সঠিক ভাবে কোরবানি দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে পারার আনন্দ। বেশি দামি গরু কিনে জবাই দেওয়া, মানুষের কাছে নিজেকে জাহির মানে কোরবানি নয়। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ বলেছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এর গোশত ও রক্ত, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা : মায়িদা, আয়াত : ২৭)

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানি নিয়ে শরিয়তের বিধান হচ্ছে, পশুকে যতটা সম্ভব কম কষ্ট দিয়ে দ্রুত জবাই করা। ইসলাম ধর্মে কোরবানির পশুকেও আল্লাহর নিদর্শন বলে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একটি পশুকে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করছেন, সেই পশুটি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে সেই ছবি বা ভিডিও প্রকাশ অমানবিক। মৃত পশুর উপরে বসে ছবি বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক মাদ্রসারা শিক্ষার্থীরাও না বুঝে এমন ছবি প্রকাশ করছেন।

কোরবানি প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন’কোন মানুষ  যদি লোক দেখানোর জন্য যদি কোরবানির পশুর ছবি পোস্ট করা হয় তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। এখানে আল্লাহ শুধু মানুষের অন্তরের দিকটা দেখেন। কোরবানির পশু নিয়ে যারা এসব কাজ করে থাকেন তাদের এটি ঠিক নয়।

সব ধরনের আমল কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত থাকা। তাই আমল করার আগেই নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, হাদিস : ১)

কোনো ব্যক্তির যদি প্রচারের উদ্দেশ্য হয় যে—তিনি বড় পশু জবাই করছেন। এতে তিনি সওয়াব পাবেন না, বরং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আল্লাহর সঙ্গে শিরক করছেন এতে আবার অন্য আমলগুলোও বরবাদ হচ্ছে। এটি যেহেতু শিরক সেহেতু এর মাধ্যমে অন্য আমলগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। কোরবানি আল্লাহর জন্য করবেন। এটি প্রচার করার মতো কিছু নয়। এটি প্রচার করার মতো কিছু নয়। এটা স্পষ্ট কথা।

লোক-দেখানো কোরবানির কোনো সওয়াব নেই। এবং এটি নিন্দনীয়। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করি। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, তা হলো রিয়া বা লোক-দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের আমলের প্রতিদান দেবেন, সেদিন লৌকিকতাকারীদের বলবেন, দুনিয়াতে যাদের দেখাতে আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের থেকে কোনো প্রতিদান পাও কি না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৫২৮)

About Author Information

Md Rasel Mia

জনপ্রিয় নিউজ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ইউএনও ২২ কি.মি সড়কে রোপন করলেন তালবীজ

কোরবানি একমাত্র আল্লাহর জন্য

কোরবানির পশুর ছবি ফেইসবুকে পোস্ট রিয়ার অন্তর্ভুক্ত,লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহ পছন্দ করেনা

সময়ঃ ০২:২১:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার :কোরবানি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। এই মহান ইবাদত নষ্ট হতে পারে সামান্য ভুলে। এমনই একটি ভুল হচ্ছে ফেসবুকে কোরবানির পশুর ছবি শেয়ার করা। যা মূলত রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে রিয়া বলা হয় লোক দেখানো আমলকে। প্রিয়নবী (স.) রিয়াকে ছোট শিরক বলেও অভিহিত করেছেন।

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো বিষয়ে ততটা ভীত নই।’ সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা। আল্লাহ কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৫২৮)

অনুমোদনহীন পশুর হাট বসানোয় ১৬ ব্যবসায়ীকে পৌনে ১ লাখ টাকা জরিমানা করলেন ঢাদসিক

আল্লাহর  দরবারে কোনো ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য প্রথম শর্তই হচ্ছে ইখলাস। ইখলাস ছাড়া এবং শিরক থাকলে ইবাদত কবুল হয় না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা শিরক থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে অংশীদার না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)

ঈদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে আনন্দঘন ছবির পাশাপাশি অনেকেই প্রকাশ করছেন কোরবানির পশু কেনা, জবাই, কাটাসহ এ সংক্রান্ত নানা ধরণের ছবি। রক্তাক্ত পশুর ছবি সহ কোরবানির পশুর ছবি প্রকাশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বির্তক। অনেকেই এসব ছবি প্রকাশে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, আবার কেউ কেউ এর পক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছেন। ধর্মীয় এই উৎসবে

কোরবানির পশু জবাই বা এ সংক্রান্ত ছবি প্রকাশে ধর্ম দৃষ্টিকোণ থেকে আজকের ঢাকাকে বলেছেন দেশের প্রখ্যাত আলেমরা।

এ প্রসঙ্গে  বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হাফেজ মাওলানা মোঃ আনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, মৌলিক ভাবে ধর্মের বিধান পালন মানেই হচ্ছে আল্লাহমুখী হওয়া। তাকওয়ার সাধনায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। ফেসবুকে ছবি প্রকাশ বা অন্য যে কোন সামাজিক মাধ্যমে  ই হোক নিজের কৃতিত্ব জাহির মৌলিকভাবে ধর্মীয় চেতনা বহির্ভূত। কোরবানি একটি ইবাদত। এই ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের বাহাদুরি প্রকাশ, ফূর্তি বা বিকৃত মনোভাব প্রকাশ ইসলামি চেতনাবিরোধী বিষয়। কোরবানির পশু জবাই কিংবা কোরবানি পশু নিয়ে ফেসবুকে বা অন্য কোনও ভাবে বাহাদুরি, অহেতুক ফূর্তি পরিহার করা উচিত। সব চেয়ে বড় কথা ইসলামে অপ্রয়োজনে ছবি তোলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশির কষ্ট হয় এমন কোনও কাজ বৈধ হলেও আড়ালে করতে বলা হয়েছে শরিয়তে। ধরুন, আপনি ফল  কিনছেন বাজার থেকে, কিন্তু সেই ফল প্রতিবেশিকে দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় আপনার প্রতিবেশি মুসলমান কি হিন্দু যেই হোন, যদি মনে করেন এ ফলের উচ্ছিষ্ট দেখে তিনি নিজ সন্তানকে তা কিনে না দিতে পেরে আফসোস করবেন, সেক্ষেত্রে এমন স্থানে ওসব ফেলতে পারেন না যা দেখে তিনি হীনমন্যতায় ‍ভুগতে পারেন। এমনটাই বলা হয়েছে শরিয়তে। কোরবানির ক্ষেত্র এ বিষয়টি মুসলমানদের বিবেচনা করা উচিত।

বরিশালের হিজলা উপজেলার কাউরিয়া কেরা মতিয়া রাবিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহম্মদ হাবিবউল্লাহ বলেন, ‘এক কথায় বলবো, অপ্রয়োজনে মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণির ছবি তোলা বা প্রকাশ করা ইসলামে নিরুৎসাহিত। কোরবানির পশুর বিকৃত ছবি হোক আর স্বাভাবিক ছবি হোক, ফেসবুকে বা অন্য কোনও মাধ্যমে অপ্রয়োজনে প্রকাশ শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় কাজ নয়। ’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন , ‘মৃত পশুর ওপর উঠে সেলফি তোলা, এসবের সাথে আমাদের সমাজ পরিচিত না। এটা বিকৃত মানসিকতার কাজ। কিন্তু উপহাস বা বিকৃতি ছাড়া সাধারণ ভাবে পশু জবাই করার বা মাংস কাটার ছবি বাংলাদেশ জন্য সমস্যা নয় বলে আমি মনে করি। এটা তো স্বাভাবিকভাবে মানুষজন বাস্তবে দেখে। পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। তবে রক্তের ছবি অনেকে সহ্য করতে পারেন না, এটা শুধু কোরবানি ক্ষেত্রে নয়, মারামারি বা অন্য দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও হতে পারে।

রাজধানীর বড় কাটরা মাদ্রসার শিক্ষক মাওলানা আনসারুল হক ইমরান বলেন ‘অনেকেই বলেন ঈদ মানে আনন্দ, কিন্তু কিসের আনন্দ ? আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ ভাবে উপার্জিত অর্থের দিয়ে পশু কেনা, সঠিক পদ্ধতিতে জবাই করে মাংস খাওয়া, গরিব-দুস্থদের  জন্য মাংস বণ্টন করা,
সঠিক ভাবে কোরবানি দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে পারার আনন্দ। বেশি দামি গরু কিনে জবাই দেওয়া, মানুষের কাছে নিজেকে জাহির মানে কোরবানি নয়। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ বলেছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এর গোশত ও রক্ত, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা : মায়িদা, আয়াত : ২৭)

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানি নিয়ে শরিয়তের বিধান হচ্ছে, পশুকে যতটা সম্ভব কম কষ্ট দিয়ে দ্রুত জবাই করা। ইসলাম ধর্মে কোরবানির পশুকেও আল্লাহর নিদর্শন বলে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একটি পশুকে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করছেন, সেই পশুটি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে সেই ছবি বা ভিডিও প্রকাশ অমানবিক। মৃত পশুর উপরে বসে ছবি বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক মাদ্রসারা শিক্ষার্থীরাও না বুঝে এমন ছবি প্রকাশ করছেন।

কোরবানি প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন’কোন মানুষ  যদি লোক দেখানোর জন্য যদি কোরবানির পশুর ছবি পোস্ট করা হয় তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। এখানে আল্লাহ শুধু মানুষের অন্তরের দিকটা দেখেন। কোরবানির পশু নিয়ে যারা এসব কাজ করে থাকেন তাদের এটি ঠিক নয়।

সব ধরনের আমল কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত থাকা। তাই আমল করার আগেই নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, হাদিস : ১)

কোনো ব্যক্তির যদি প্রচারের উদ্দেশ্য হয় যে—তিনি বড় পশু জবাই করছেন। এতে তিনি সওয়াব পাবেন না, বরং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আল্লাহর সঙ্গে শিরক করছেন এতে আবার অন্য আমলগুলোও বরবাদ হচ্ছে। এটি যেহেতু শিরক সেহেতু এর মাধ্যমে অন্য আমলগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। কোরবানি আল্লাহর জন্য করবেন। এটি প্রচার করার মতো কিছু নয়। এটি প্রচার করার মতো কিছু নয়। এটা স্পষ্ট কথা।

লোক-দেখানো কোরবানির কোনো সওয়াব নেই। এবং এটি নিন্দনীয়। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করি। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, তা হলো রিয়া বা লোক-দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের আমলের প্রতিদান দেবেন, সেদিন লৌকিকতাকারীদের বলবেন, দুনিয়াতে যাদের দেখাতে আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের থেকে কোনো প্রতিদান পাও কি না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৫২৮)