০১:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নাসা গ্রুপের কর্ণধারের  বিরুদ্ধে ৩০ লাখ ডলার পাচারের অভিযোগের, অনুসন্ধান শুরু

ক্ষমতার অপব্যবহার করে দরবেশ নজরুল মজুমদার দুবাই ,লন্ডন,যুক্তরাষ্ট্র,কাতার ও সৌদিতে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার

  • Md Mizanur Rahman
  • সময়ঃ ০২:০৪:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ৪৭ সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেখতে দরবেশের মতো মনে হলেও বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো ধ্বংসের মূল কারিগর ছিলেন এই নজরুল ইসলাম মজুমদার। শেখ হাসিনার শাসনামলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম কঠিন করে তুলেছিলেন এই ব্যাংক খাতের স্বঘোষিত পিতৃপুরুষ।নজরুল ইসলাম মজুমদার নাসা গ্রুপ ও বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তবে এসব ছাপিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসাবে তার পরিচিতি সর্বত্র। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এ সুবাদে তিনি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান পদ পেয়ে যান। এই পদে যাওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু হয় নজরুল ইসলাম মজুমদারের ক্ষমতার অপব্যবহার। একটানা ৭ মেয়াদের অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে ব্যাংক খাতের মাফিয়া হয়ে উঠেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। তার দীর্ঘ ১৬ বছরে মুদি দোকানের মতো গড়ে তোলেন নতুন নতুন ব্যাংক।প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদে তিনি দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম মাফিয়া বনে যান। আর্থিক খাতের নানা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির টাকায় দেশ-বিদেশে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের একাধিক দেশে রয়েছে তার বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান  নজরুল ইসলাম মজুমদার  গ্রেপ্তার

ব্যাংক উদ্যোক্তাদের অভিভাবক হলেও তার সামনেই চলেছে ব্যাংক লুটের মহা উৎসব। সেদিকে না তাকিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে কম কিছু করেনি নজরুল ইসলাম মসজুমদার। বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ত্রাণ তহবিলে সহায়তার নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাংক ক্ষাতে করেছেন লাগামহীন চাঁদাবাজি। অনেককে বাধ্য করতেন ত্রান সহায়তা দিতে। তার এমন কর্ম কাণ্ডে অনেকে বিরক্ত হলেও বন্ধ রাখতেন মুখ। আড়ালে তাকে ব্যাংক ক্ষাতের দরবেশ নাম দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সূত্র জানায়, লন্ডন এবং হংকং ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মজুমদারের বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। সেখানে রিয়েল এস্টেট খাতে একাধিক কোম্পানি খুলে তিনি ব্যবসা করছেন। এছাড়া ২০১৫ সালের দিকে তিনি সৌদি আরবের কৃষি খাতে বিনিয়োগ করেন। সৌদির একাধিক খেজুর বাগানে বিনিয়োগ রয়েছে তার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতারের রাজধানী দোহায় তার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সিআইডি জানায়, ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নাসা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে শত শত কোটি টাকা দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

সূত্র জানায়, বিএফআইইউ’র অনুসন্ধানে লন্ডনের বাইরে হংকংয়ে নাসা গ্রুপের অর্থ পাচারের অকাট্য প্রমাণ মেলে। হংকংয়ের এম/এস এম.এন এন্টারপ্রাইজ এবং এম/এস ওয়ার্ল্ড টেক্সট্রিম সিও নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে নাসা গ্রুপ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করে। আবার রহস্যজনকভাবে এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকেই বিভিন্ন গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ আমদানি করা হয়। এখানেই শেষ নয়, হংকংয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যাংক হিসাব থেকে পুনরায় লন্ডনে মজুমদারের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। এতে তার অর্থ পাচারের বিষয়টি দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়। কিন্তু এসব প্রমাণ সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তখন মজুমদারের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত

এদিকে ট্রেড বেইসড (বাণিজ্যভিত্তিক) মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. আজাদ রহমান।

সূত্র বলছে, মজুমদার মূলত ২০১৭ সালের পর দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নিজেকে একক ক্ষমতাধর বলে জানান দেন। এ সময় তার বড় ছেলে ওয়ালিদ ইবনে ইসলামের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ভায়রার মেয়ের বিয়ে হয়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে শেখ হাসিনাকে তিনি বোন (বেয়াইন) ডাকা শুরু করেন।

নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অন্যতম উদ্দ্যেক্তা পরিচালক। নিজে চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকটিতে কায়েম করেছেন পরিবার তন্ত্র। তার স্ত্রী নাসরিন ইসলামও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। ২০২৪ সালের ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সাথে একিভূত হতে সমঝোতা স্বারক সই করেছে ৪র্থ প্রজন্মের ব্যংক পদ্মার সাথে। এরপর এ নিয়ে কোন অগ্রগতি শোনা যায়নি।

বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাত নাসা গ্রুপেরও চেয়ারম্যান তিনি। প্রতিষ্ঠানটি নামে বেনামে এক্সিম ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ঋন।  কোন ব্যাংক ঋন দিতে না চাইলে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে দিতেন চাপ। ক্ষমতা ধরে রাখতে আরেক রাঘব বোয়াল দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের সাথেও ছিলো ভালো সখ্যতা।

একটি জাতীয় দৈনিকে ২০২০ সালে রিপোর্টে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার শীর্ষস্থানীয় এই ব্যবসায়ীর নামে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার, অনিয়ম, আমদানি-রপ্তানী ব্যবসার আড়ালে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং পাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়। ক্ষমতা ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন এই মাফিয়া নজরুল।

সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ অর্জন কর ফাঁকি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতিয় রাজস্ব বোর্ডের ইন্টেলিজেন্স সেল। তালিকায় থাকা ৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২২ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরেুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ১৩ টি ব্যাংকে নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপ ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি ব্যাংক থেকে সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন তিনি। রপ্তানির আবেদনে ঋণ নিলেও তা ব্যবহার করেছেন ভিন্ন খাতে। এসব ঋণের শত শত কোটি টাকা তিনি নিজে উত্তোলনও করেন। ২০২০ সালের মধ্যে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের মধ্যে কমপক্ষে ২১০ কোটি টাকা যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফিরোজা গার্মেন্টস লিমিটেড ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১৩০টি এলসি বা বিক্রয় চুক্তি গ্রহণ করে। কিন্তু এর বিপরীতে নাসা গ্রুপ পণ্য পাঠালেও এর রপ্তানি মূল্য প্রায় ৩০ লাখ ডলার বাংলাদেশে না এনে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য–প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারে করে লন্ডনের ফিলিমোর গার্ডেন ও ব্রান্সউইক গার্ডেনে তাঁর মেয়ে আনিকা ইসলামের নামে বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল এনে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নাসা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে (আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং) দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, সিআইডিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।

 

About Author Information

Md Mizanur Rahman

জনপ্রিয় নিউজ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ইউএনও ২২ কি.মি সড়কে রোপন করলেন তালবীজ

নাসা গ্রুপের কর্ণধারের  বিরুদ্ধে ৩০ লাখ ডলার পাচারের অভিযোগের, অনুসন্ধান শুরু

ক্ষমতার অপব্যবহার করে দরবেশ নজরুল মজুমদার দুবাই ,লন্ডন,যুক্তরাষ্ট্র,কাতার ও সৌদিতে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার

সময়ঃ ০২:০৪:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেখতে দরবেশের মতো মনে হলেও বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো ধ্বংসের মূল কারিগর ছিলেন এই নজরুল ইসলাম মজুমদার। শেখ হাসিনার শাসনামলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম কঠিন করে তুলেছিলেন এই ব্যাংক খাতের স্বঘোষিত পিতৃপুরুষ।নজরুল ইসলাম মজুমদার নাসা গ্রুপ ও বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তবে এসব ছাপিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসাবে তার পরিচিতি সর্বত্র। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এ সুবাদে তিনি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান পদ পেয়ে যান। এই পদে যাওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু হয় নজরুল ইসলাম মজুমদারের ক্ষমতার অপব্যবহার। একটানা ৭ মেয়াদের অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে ব্যাংক খাতের মাফিয়া হয়ে উঠেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। তার দীর্ঘ ১৬ বছরে মুদি দোকানের মতো গড়ে তোলেন নতুন নতুন ব্যাংক।প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদে তিনি দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম মাফিয়া বনে যান। আর্থিক খাতের নানা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির টাকায় দেশ-বিদেশে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের একাধিক দেশে রয়েছে তার বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান  নজরুল ইসলাম মজুমদার  গ্রেপ্তার

ব্যাংক উদ্যোক্তাদের অভিভাবক হলেও তার সামনেই চলেছে ব্যাংক লুটের মহা উৎসব। সেদিকে না তাকিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে কম কিছু করেনি নজরুল ইসলাম মসজুমদার। বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ত্রাণ তহবিলে সহায়তার নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাংক ক্ষাতে করেছেন লাগামহীন চাঁদাবাজি। অনেককে বাধ্য করতেন ত্রান সহায়তা দিতে। তার এমন কর্ম কাণ্ডে অনেকে বিরক্ত হলেও বন্ধ রাখতেন মুখ। আড়ালে তাকে ব্যাংক ক্ষাতের দরবেশ নাম দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সূত্র জানায়, লন্ডন এবং হংকং ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মজুমদারের বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। সেখানে রিয়েল এস্টেট খাতে একাধিক কোম্পানি খুলে তিনি ব্যবসা করছেন। এছাড়া ২০১৫ সালের দিকে তিনি সৌদি আরবের কৃষি খাতে বিনিয়োগ করেন। সৌদির একাধিক খেজুর বাগানে বিনিয়োগ রয়েছে তার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতারের রাজধানী দোহায় তার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সিআইডি জানায়, ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নাসা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে শত শত কোটি টাকা দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

সূত্র জানায়, বিএফআইইউ’র অনুসন্ধানে লন্ডনের বাইরে হংকংয়ে নাসা গ্রুপের অর্থ পাচারের অকাট্য প্রমাণ মেলে। হংকংয়ের এম/এস এম.এন এন্টারপ্রাইজ এবং এম/এস ওয়ার্ল্ড টেক্সট্রিম সিও নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে নাসা গ্রুপ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করে। আবার রহস্যজনকভাবে এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকেই বিভিন্ন গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ আমদানি করা হয়। এখানেই শেষ নয়, হংকংয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যাংক হিসাব থেকে পুনরায় লন্ডনে মজুমদারের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। এতে তার অর্থ পাচারের বিষয়টি দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়। কিন্তু এসব প্রমাণ সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তখন মজুমদারের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত

এদিকে ট্রেড বেইসড (বাণিজ্যভিত্তিক) মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. আজাদ রহমান।

সূত্র বলছে, মজুমদার মূলত ২০১৭ সালের পর দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নিজেকে একক ক্ষমতাধর বলে জানান দেন। এ সময় তার বড় ছেলে ওয়ালিদ ইবনে ইসলামের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ভায়রার মেয়ের বিয়ে হয়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে শেখ হাসিনাকে তিনি বোন (বেয়াইন) ডাকা শুরু করেন।

নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অন্যতম উদ্দ্যেক্তা পরিচালক। নিজে চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকটিতে কায়েম করেছেন পরিবার তন্ত্র। তার স্ত্রী নাসরিন ইসলামও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। ২০২৪ সালের ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সাথে একিভূত হতে সমঝোতা স্বারক সই করেছে ৪র্থ প্রজন্মের ব্যংক পদ্মার সাথে। এরপর এ নিয়ে কোন অগ্রগতি শোনা যায়নি।

বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাত নাসা গ্রুপেরও চেয়ারম্যান তিনি। প্রতিষ্ঠানটি নামে বেনামে এক্সিম ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ঋন।  কোন ব্যাংক ঋন দিতে না চাইলে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে দিতেন চাপ। ক্ষমতা ধরে রাখতে আরেক রাঘব বোয়াল দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের সাথেও ছিলো ভালো সখ্যতা।

একটি জাতীয় দৈনিকে ২০২০ সালে রিপোর্টে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার শীর্ষস্থানীয় এই ব্যবসায়ীর নামে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার, অনিয়ম, আমদানি-রপ্তানী ব্যবসার আড়ালে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং পাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়। ক্ষমতা ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন এই মাফিয়া নজরুল।

সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ অর্জন কর ফাঁকি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতিয় রাজস্ব বোর্ডের ইন্টেলিজেন্স সেল। তালিকায় থাকা ৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২২ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরেুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ১৩ টি ব্যাংকে নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপ ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি ব্যাংক থেকে সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন তিনি। রপ্তানির আবেদনে ঋণ নিলেও তা ব্যবহার করেছেন ভিন্ন খাতে। এসব ঋণের শত শত কোটি টাকা তিনি নিজে উত্তোলনও করেন। ২০২০ সালের মধ্যে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের মধ্যে কমপক্ষে ২১০ কোটি টাকা যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফিরোজা গার্মেন্টস লিমিটেড ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১৩০টি এলসি বা বিক্রয় চুক্তি গ্রহণ করে। কিন্তু এর বিপরীতে নাসা গ্রুপ পণ্য পাঠালেও এর রপ্তানি মূল্য প্রায় ৩০ লাখ ডলার বাংলাদেশে না এনে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য–প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারে করে লন্ডনের ফিলিমোর গার্ডেন ও ব্রান্সউইক গার্ডেনে তাঁর মেয়ে আনিকা ইসলামের নামে বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল এনে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নাসা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে (আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং) দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, সিআইডিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।