১২:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আল জাজিরা অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ির মালিক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

  • Md Mizanur Rahman
  • সময়ঃ ০৮:৫৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩৬ সময়

স্টাফ রিপোর্টার:শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একের পর এক সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলছে। এমনই একজন মন্ত্রী হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী(জাবেদ) । তিনি যুক্তরাজ্যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সামান্য সরকারি বেতন পেয়েও ভিনদেশে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ির মালিক। এর বেশির ভাগই বার্কলি গ্রুপের মতো শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা। বাড়িগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ৩২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়েও তাঁর সম্পদ রয়েছে।

একাকিত্ব জীবন  জাপানে ৬ মাসে মৃত ৪০ হাজার বৃদ্ধ, বিচিত্র সংকটে উদীয়মান সূর্যের দেশ

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার রাতে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আল–জাজিরা। অনুসন্ধান করেছে আল–জাজিরার অনুসন্ধানী দল ‘আই ইউনিট’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান লন্ডনের বাইরে দুবাইয়ে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ৫৪টি সম্পদের মালিক হন। যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি নয়টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি ম্যানহাটানসহ নিউইয়র্কের প্রধান এলাকায় এবং চারটি নদীর ওপারে নিউ জার্সিতে।সাবেক মন্ত্রী  সাইফুজ্জামান চৌধুরী  দেশের বাইরের এত পরিমাণ সম্পদ তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান।

ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত। সবমিলিয়ে তিনি পাঁচশরও বেশি বাড়ি কিনেছেন। যেগুলোর মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।

আল জাজিরা বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ সখ্যতা ছিল সাইফুজ্জামানের।

যা তিনি নিজেই স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক ছিলেন। আমিও তার কাছের লোক। শেখ হাসিনা আমার বস, তিনি জানেন যুক্তরাজ্যে আমার ব্যবসা আছে। ’

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সালের দিকে সম্পত্তি কেনা বাড়িয়ে দেন। ২০১৯ সালে যখন তিনি মন্ত্রী হন, তখন এটি আরও বাড়ে।

আল জাজিরা বলেছে, গত বছর বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে তাদের সাংবাদিক সাইফুজ্জামানের ১৪ মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে যায়। ওই সময় ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকদের সাইফুজ্জামান বড়াই করে জানান, তিনি কুমিরের চামড়ার হাতে তৈরি জুতার ওপর হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামী দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট তৈরি করে পরেন।

এ ছাড়া ওই সময় লন্ডনের নিজের বাড়িও ঘুরিয়ে দেখান তিনি। যেটিতে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর এবং নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়া।

সাবেক এই মন্ত্রী আল জাজিরার কাছে বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে নিজের বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই সম্পদ কিনেছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে এখন অর্থপাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং তার পরিবারের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান, তখন দেশে ছেড়ে চলে যান সাইফুজ্জামান।

Tag :
About Author Information

Md Mizanur Rahman

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

আল জাজিরা অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ির মালিক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

সময়ঃ ০৮:৫৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার:শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একের পর এক সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলছে। এমনই একজন মন্ত্রী হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী(জাবেদ) । তিনি যুক্তরাজ্যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সামান্য সরকারি বেতন পেয়েও ভিনদেশে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ির মালিক। এর বেশির ভাগই বার্কলি গ্রুপের মতো শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা। বাড়িগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ৩২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়েও তাঁর সম্পদ রয়েছে।

একাকিত্ব জীবন  জাপানে ৬ মাসে মৃত ৪০ হাজার বৃদ্ধ, বিচিত্র সংকটে উদীয়মান সূর্যের দেশ

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার রাতে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আল–জাজিরা। অনুসন্ধান করেছে আল–জাজিরার অনুসন্ধানী দল ‘আই ইউনিট’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান লন্ডনের বাইরে দুবাইয়ে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ৫৪টি সম্পদের মালিক হন। যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি নয়টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি ম্যানহাটানসহ নিউইয়র্কের প্রধান এলাকায় এবং চারটি নদীর ওপারে নিউ জার্সিতে।সাবেক মন্ত্রী  সাইফুজ্জামান চৌধুরী  দেশের বাইরের এত পরিমাণ সম্পদ তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান।

ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত। সবমিলিয়ে তিনি পাঁচশরও বেশি বাড়ি কিনেছেন। যেগুলোর মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।

আল জাজিরা বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ সখ্যতা ছিল সাইফুজ্জামানের।

যা তিনি নিজেই স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক ছিলেন। আমিও তার কাছের লোক। শেখ হাসিনা আমার বস, তিনি জানেন যুক্তরাজ্যে আমার ব্যবসা আছে। ’

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সালের দিকে সম্পত্তি কেনা বাড়িয়ে দেন। ২০১৯ সালে যখন তিনি মন্ত্রী হন, তখন এটি আরও বাড়ে।

আল জাজিরা বলেছে, গত বছর বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে তাদের সাংবাদিক সাইফুজ্জামানের ১৪ মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে যায়। ওই সময় ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকদের সাইফুজ্জামান বড়াই করে জানান, তিনি কুমিরের চামড়ার হাতে তৈরি জুতার ওপর হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামী দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট তৈরি করে পরেন।

এ ছাড়া ওই সময় লন্ডনের নিজের বাড়িও ঘুরিয়ে দেখান তিনি। যেটিতে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর এবং নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়া।

সাবেক এই মন্ত্রী আল জাজিরার কাছে বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে নিজের বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই সম্পদ কিনেছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে এখন অর্থপাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং তার পরিবারের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান, তখন দেশে ছেড়ে চলে যান সাইফুজ্জামান।