০৭:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লেবাননের ভেতরে হিজবুল্লাহর সাথে লড়াইয়ে ৮ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত

  • Md Mizanur Rahman
  • সময়ঃ ০২:১৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ২৬ সময়

ইসরায়েল বুধবার (২ অক্টোবর) জানিয়েছে তাদের ৮ জন সৈন্য দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সাথে লড়াই-এ নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের ভেতরে হামলা শুরু করার পর এই হতাহতের খবর দেয়া হল।

ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তারা জানায়, সাতজন সৈন্য দুটি আলাদা ঘটনায় নিহত হয়। আরও সাতজন সৈন্য আহত হয়। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই লড়াই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক।

এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, একটি কমান্ডো ব্রিগেডের ২২-বছর বয়সী ক্যাপ্টেন লেবাননে যুদ্ধে মারা গেছে, যা ছিল তাদের সর্বশেষ অভিযান শুরুর পর প্রথম মৃত্যু।

এক দিন আগে মঙ্গলবার ইসরায়েলের উপর ইরানের ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গোটা অঞ্চল উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে।

গাজায় বছরব্যাপী যুদ্ধেরও কোন শেষ দেখা যাচ্ছে না, যেখানে ইসরায়েলি স্থল এবং বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ আরও ৫১ জন নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করলে গাজার যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৪১,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছ।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

একাধিক রণাঙ্গনে সংঘাত বৃদ্ধির ফলে মধ্যেপ্রাচ্যে ব্যাপক যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে, যে যুদ্ধে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে যেতে পারে। ইরান হিজবুল্লাহ এবং হামাসকে সমর্থন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য তাদের সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম সে অঞ্চলে পাঠিয়েছে।

হিজবুল্লাহ, যাদেরকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করা হয়, তারা বলছে সীমান্তের কাছে লেবাননের ভেতরে দুটি জায়গায় তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে লড়াই করছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে বিমান হামলার সাহায্যে স্থল বাহিনীর সৈন্যরা “খুব কাছা-কাছি লড়াইয়ে” জঙ্গিদের হত্যা করেছে। তবে এ’ঘটনা কোথায় হয়েছে তা তারা বলেনি।

ইসরায়েলের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সেনা বাহিনী সীমান্তে হাজার হাজার অতিরিক্ত সৈন্য এবং গোলন্দাজ বাহিনী পাঠানোর পর পদাতিক এবং সাঁজোয়া ইউনিট দক্ষিণ লেবাননে লড়াই করছে।

হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবাননে একটি বোমা বিস্ফোরিত করে একদল ইসরায়েলি সৈন্যকে হতাহত করেছে।

লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তচ্যুত

লেবাননের সেনাবাহিনী তাদের তরফ থেকে ইসরায়েলের অভিযান শুরু হবার কথা প্রথমবারের মত নিশ্চিত করে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্ত পেড়িয়ে ৪০০ মিটার মত ঢুকে “কিছু সময়ের পর” নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

ইসরায়েলের সেনা বাহিনী ৫০টি গ্রাম এবং ছোট শহরের বাসিন্দাদের আওয়ালি নদীর উত্তর দিকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে। সীমান্ত থেকে আওয়ালি নদী ৬০ কিলোমিটার দূরে এবং তা ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মাঝে জাতিসংঘ-ঘোষিত ‘বাফার জোন’-এর উত্তর অংশ থেকেও আরও ভেতরে।

বর্তমান সংঘাত বাড়তে থাকার কারণে সীমান্তের দু’পাশেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতোমধ্যে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ইসরায়েল বলছে, সীমান্তের কাছে তাদের বাড়িঘর থেকে যে হাজার হাজার নাগরিক বাস্তচ্যুত হয়েছে, তারা নিরাপদে না ফেরা পর্যন্ত হিজবুল্লাহর উপর আক্রমণ অব্যাহত রাখা হবে।

অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ অঙ্গীকার করেছে গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলে রকেট হামলা অব্যাহত রাখবে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, গত দু’সপ্তাহে লেবাননে ইসরায়েলি আক্রমণে ১,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ নারী ও শিশু।

Tag :
About Author Information

Md Mizanur Rahman

জনপ্রিয় নিউজ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ইউএনও ২২ কি.মি সড়কে রোপন করলেন তালবীজ

লেবাননের ভেতরে হিজবুল্লাহর সাথে লড়াইয়ে ৮ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত

সময়ঃ ০২:১৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

ইসরায়েল বুধবার (২ অক্টোবর) জানিয়েছে তাদের ৮ জন সৈন্য দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সাথে লড়াই-এ নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের ভেতরে হামলা শুরু করার পর এই হতাহতের খবর দেয়া হল।

ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তারা জানায়, সাতজন সৈন্য দুটি আলাদা ঘটনায় নিহত হয়। আরও সাতজন সৈন্য আহত হয়। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই লড়াই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক।

এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, একটি কমান্ডো ব্রিগেডের ২২-বছর বয়সী ক্যাপ্টেন লেবাননে যুদ্ধে মারা গেছে, যা ছিল তাদের সর্বশেষ অভিযান শুরুর পর প্রথম মৃত্যু।

এক দিন আগে মঙ্গলবার ইসরায়েলের উপর ইরানের ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গোটা অঞ্চল উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে।

গাজায় বছরব্যাপী যুদ্ধেরও কোন শেষ দেখা যাচ্ছে না, যেখানে ইসরায়েলি স্থল এবং বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ আরও ৫১ জন নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করলে গাজার যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৪১,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছ।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

একাধিক রণাঙ্গনে সংঘাত বৃদ্ধির ফলে মধ্যেপ্রাচ্যে ব্যাপক যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে, যে যুদ্ধে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে যেতে পারে। ইরান হিজবুল্লাহ এবং হামাসকে সমর্থন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য তাদের সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম সে অঞ্চলে পাঠিয়েছে।

হিজবুল্লাহ, যাদেরকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করা হয়, তারা বলছে সীমান্তের কাছে লেবাননের ভেতরে দুটি জায়গায় তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে লড়াই করছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে বিমান হামলার সাহায্যে স্থল বাহিনীর সৈন্যরা “খুব কাছা-কাছি লড়াইয়ে” জঙ্গিদের হত্যা করেছে। তবে এ’ঘটনা কোথায় হয়েছে তা তারা বলেনি।

ইসরায়েলের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সেনা বাহিনী সীমান্তে হাজার হাজার অতিরিক্ত সৈন্য এবং গোলন্দাজ বাহিনী পাঠানোর পর পদাতিক এবং সাঁজোয়া ইউনিট দক্ষিণ লেবাননে লড়াই করছে।

হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবাননে একটি বোমা বিস্ফোরিত করে একদল ইসরায়েলি সৈন্যকে হতাহত করেছে।

লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তচ্যুত

লেবাননের সেনাবাহিনী তাদের তরফ থেকে ইসরায়েলের অভিযান শুরু হবার কথা প্রথমবারের মত নিশ্চিত করে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্ত পেড়িয়ে ৪০০ মিটার মত ঢুকে “কিছু সময়ের পর” নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

ইসরায়েলের সেনা বাহিনী ৫০টি গ্রাম এবং ছোট শহরের বাসিন্দাদের আওয়ালি নদীর উত্তর দিকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে। সীমান্ত থেকে আওয়ালি নদী ৬০ কিলোমিটার দূরে এবং তা ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মাঝে জাতিসংঘ-ঘোষিত ‘বাফার জোন’-এর উত্তর অংশ থেকেও আরও ভেতরে।

বর্তমান সংঘাত বাড়তে থাকার কারণে সীমান্তের দু’পাশেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতোমধ্যে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ইসরায়েল বলছে, সীমান্তের কাছে তাদের বাড়িঘর থেকে যে হাজার হাজার নাগরিক বাস্তচ্যুত হয়েছে, তারা নিরাপদে না ফেরা পর্যন্ত হিজবুল্লাহর উপর আক্রমণ অব্যাহত রাখা হবে।

অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ অঙ্গীকার করেছে গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলে রকেট হামলা অব্যাহত রাখবে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, গত দু’সপ্তাহে লেবাননে ইসরায়েলি আক্রমণে ১,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ নারী ও শিশু।