বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি, অর্ধলক্ষ মানুষ রক্ত দেয়নি। যে সিস্টেমগুলো সংস্কারের প্রয়োজন তা সংস্কার শেষেই যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন দেওয়া উচিত।’
আজ শনিবার সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় সংবিধান সংস্কারের প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, ‘যে সংবিধান এদেশের মানুষকে ৫ বছরের জন্য জনতার সরকার উপহার দিতে পারেনি সে সংবিধানের সংস্কার করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৬ বছরে সবচেয়ে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান ছিল নির্বাচন কমিশন। অন্তবর্তী সরকারকে নির্বাচন কমিশনের যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।’
হাইকোর্টে এখনও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা বসে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা বিভিন্ন পদ দখল করে আছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে তারা যোগ্যতা নয় তোষামোদি করে সেসব পদ দখল করেছে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা বলছি না রাষ্ট্রের সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচনে যান। আমরা এটাও বলছি না আগামী পাঁচ-ছয় বছর সংস্কার করেন। কিন্তু সংস্কারের জন্য ন্যূনতম একটা যৌক্তিক সময় লাগবে। কোনো বিবেকবান মানুষ তাঁর জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারবে না যে এক বছরের মধ্যে সবকিছু সংস্কার হয়ে যাবে। ১৬ বছর ধরে যে সিস্টেমগুলোকে ধীরে ধীরে ভেঙে শেষ করা হয়েছে; সেই সিস্টেমগুলোকে, সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সিস্টেমগুলোর সংস্কার করতে যৌক্তিক সময় প্রয়োজন। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তা না হলে আমরা আগের জায়গাতেই থেকে যাব।’
সারজিস আলম বলেন, শুধু একটা নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না। এর পাশাপাশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। তা না হলে নির্বাচন দিলে আবার জবরদখলের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে। আবার এই নির্বাচন ঘিরে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সেটার সমাধানের জন্য একটা বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। তাই বিচারব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। গত ১৬ বছরে নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল বলে মন্তব্য তাঁর।
অভ্যুত্থান কিছু লোক দিয়ে হয়নি মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, যেই ফ্যাসিস্ট সরকারকে ১৬ বছরে বাংলাদেশের নামীদামি রাজনৈতিক সংগঠন নড়াতে পারেনি, সেই শেখ হাসিনা কিছু লোকের জন্য এই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছিল বলে অভ্যুত্থান ঘটেছিল এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদের পরিবারের তালিকা পাওয়া গেছে দাবি করে সারজিস আলম বলেন, যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক দেওয়া হচ্ছে। সিলেট বিভাগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ১৮ জনের পরিবারের সদস্যদের হাতে ৫ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।
এর আগে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
এর আগে সকাল দশটায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গণঅভ্যুত্থানে নিহত ১৮টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এতে ১৮ পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে চেক প্রদান করা হয়। এসময় ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাইবুব স্নিগ্ধ সহ ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।