১০:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হজ পালনের নিয়ম, কোন দিন কী করতে হবে   

  • Md Rasel Mia
  • সময়ঃ ১২:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
  • ৫৩ সময়

স্টাফ রিপোর্টার ;হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং মুসলমানদের বিশ্ব সম্মিলন। সামর্থ্যবানদের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। যাদের বায়তুল্লাহ শরিফে গমনাগমনের, হজের যাবতীয় খরচ বহনের এবং এই সময়ে পরিবারের ভরণ-পোষণের সামর্থ্য রয়েছে তাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে।

ইসরায়েলকে টার্গেট করে বড় ধরনের মিসাইল হামলা চালালো হামাস

হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির অন্যতম। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।’

হজের প্রকারভেদ

সম্পাদন পদ্ধতি অনুসারে হজ তিন প্রকার: (১) ইফরাদ, (২) কিরান ও (৩) তামাত্তু। শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পাদন হওয়ার পর ইহরাম ছাড়তে হবে।

একই ইহরামে হজ ও ওমরাহ একত্রে সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একত্রে ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে সেই ইহরামেই হজ সম্পাদন করে ১০ জিলহজ ইহরাম ছাড়তে হবে।
একইসফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফ ও সায়ি করে চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করতে হবে।

কিরান ও তামাত্তু হজে দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। অন্যথা ১০টি রোজা পালন করতে হবে, এর মধ্যে অন্তত তিনটি রাখতে হবে হজকালীন মক্কায়, তবে হজের বা আরাফাতের দিন ও কোরবানির ঈদের দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে।

হজের ফরজসমূহ

হজের ফরজ তিনটি: ১. ইরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা, ২. অকুফে আরাফা করা, ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা।

হজের ওয়াজিবসমূহ

হজের ওয়াজিব সাতটি: ১. আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামের স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা, ২. সাফা ও মারওয়া সায়ি করা বা দৌড়ানো, ৩. রমিয়ে জিমার বা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা, ৪. তামাত্তু ও কিরান হজে দমে শোকর বা কোরবানি করা, ৫. মাথার চুল মুড়িয়ে বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা, ৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা; ৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা। (আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)

হজের সুন্নতসমূহ

হজের সুন্নত ১০টি: ১. তাওয়াফে কুদুম বা প্রথম তাওয়াফ করা (ইফরাদ ও কিরান হজকারীর জন্য)। ২. তাওয়াফের সময় রমল করা (প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা)। ৩. খলিফা অথবা তাঁর প্রতিনিধি তিন দিন তিন স্থানে খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া। (৭ জিলহজ কাবা শরিফের হারাম শরিফে, ৯ জিলহজ আরাফায় মসজিদে নামিরাতে, ১১ জিলহজ মিনাতে।) ৪. আট জিলহজ মক্কা শরিফ থেকে মিনাতে গিয়ে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা। ৫. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া। ৬. অকুফে আরাফা বা আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে (দুপুরের পূর্বে) গোসল করা। ৭. ৯ জিলহজ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা। ৯. ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনাতে রাত যাপন করা। ১০. মিনা থেকে মক্কা শরিফ প্রত্যাবর্তনের সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামের জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।

বাংলাদেশিদের জন্য হজের ধারাবাহিক কাজ উল্লেখ করা হলো।

প্রাথমিক কাজ  

১. বিমানে আরোহণের আগে যথাযথ নিয়মে ইহরাম বাঁধা। ২. বিমান থেকে জিদ্দায় নেমে মক্কায় নির্দিষ্ট বাড়িতে বা অবস্থানে গিয়ে ব্যাগ রেখে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে অজু করে মুয়াল্লিমের মনোনীত লোকের সঙ্গে কাবাঘরে গমন। ৩. প্রাথমিক তাওয়াফ করা। সাতবার কাবা ঘরের চারদিকে ঘুরতে হবে। কাবাঘরের হাজরে আসওয়াদ যে কোণায় স্থাপিত সেখান থেকে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা। সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত ইশারা করে সে হাতের ওপর চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। ৪. সাত চক্করের প্রথম তিন চক্করে একটু দ্রুত চলে শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। এটাকে ‘রমল’ বলে। তাওয়াফের সময় পুরুষের গায়ের চাদর ডান হাতের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধে রাখতে হবে যেন ডান কাঁধ ও বাহু বের হয়ে থাকে। এটাকে ‘ইজতেবা’ বলে। এ দুটি তাওয়াফের সুন্নত যা তাওয়াফে জিয়ারতেও করতে হবে। অতিরিক্ত উমরার তাওয়াফেও তা করতে হয়। ৫. সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হবে সাতবার। শুরু করতে হবে সাফা থেকে, সপ্তমবার দৌড় শেষ হবে মারওয়ায়। ৬. এরপর মাথা মুড়াতে হবে বা চুল ছাটতে হবে। ৭. এরপরে মূল হজের কয়েক দিন বাকি থাকলে ইহরাম ছেড়ে স্বাভাবিক পোশাক পরা যাবে। মুয়াল্লিমের মনোনীত লোকের সঙ্গে মদিনায়ও যাওয়া যেতে পারে। মূল হজের আগে ইহরাম ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাকে হজ্জে তামাত্তু বলে। সাধারণত আমাদের দেশের হাজি সাহেবরা এ হজেরই নিয়ত করে থাকেন।

মূল কাজ

হজের মূল কাজ শুরু হয় ৮ জিলহজ, শেষ হয় ১২ জিলহজ। এ পাঁচ দিনের কাজগুলো সচেতনতার সঙ্গে যথার্থভাবে আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে চারটি ফরজ ও ওয়াজিবের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

৮ জিলহজের কাজ

এদিন নিজ কামরায় অথবা কাবাঘরে বসে হজের ইহরাম বেঁধে মক্কা শরিফ থেকে মুয়াল্লিমের ব্যবস্থাপনায় অথবা নিজস্ব উদ্যোগে (মুয়াল্লিম না থাকলে) ‘মিনায়’ (মক্কার কাছাকাছি একটি উপশহর) পৌঁছাতে হবে। সেখানে ওই দিন জোহর, আছর, মাগরিব, ইশা এবং পরের দিনের ফজর (মোট পাঁচ ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করতে হবে।

৯  জিল হজের কাজ
সকালে মিনা থেকে রওনা হয়ে আরাফাতের প্রান্তরে পৌঁছতে হবে। এখানে জোহর ও আছর একত্রে পড়তে হবে। খুতবার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত তালবিয়া, তাহমিদ, দোয়া-দরুদ, ইসতিগফার ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে।  সূর্যাস্তের পর মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হতে হবে। মাগরিবের ওয়াক্ত চলে গেলেও, রাত গভীর হলেও মুজদালিফায় পৌঁছার পরেই মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে পড়তে হবে। মাগরিবের ওয়াক্ত চলে যায় এ বিবেচনায় কোনোক্রমেই যাত্রাবিরতি করে মাগরিব পড়া যাবে না। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশা পড়াটাই হজের আহকাম। এ রাতে (৯ তারিখের দিবাগত রাত) মুজদালিফায় বিশ্রাম নিতে বা ঘুমাতে হবে। ফজর পড়ে সূর্যোদয়ের আগে আবার মিনার উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে। মুজদালিফা প্রান্তর থেকে ন্যূনতম ৪৯টি পাথর (ছোট) সঙ্গে আনতে হবে।

১০ জিলহজের কাজ

মুজদালিফা থেকে রওনা হয়ে মিনা পৌঁছতে হবে।  এদিন কেবল শয়তানের বড় স্তম্ভে (জামরাতে আকাবা) ৭টি পাথর মারতে হবে। অন্য স্তম্ভগুলোতে এদিন পাথর মারা যাবে না। (জামরাতে) পাথর মারার পর কুরবানির নির্দিষ্ট নিয়মে একটি কুরবানি করতে হবে। এদিন ক্ষতিপূরণমূলক কুরবানি (দম) করা যাবে এবং একাধিক নফল কুরবানি করারও সুযোগ রয়েছে।  কুরবানি করার পর মাথা মুড়াতে হবে অথবা চুল ছাঁটতে হবে। এদিন এসব কাজ সমাধা করার পর ফরজ তাওয়াফ বা তাওয়াফে জিয়ারত করতে হবে। অবশ্য ভিড় এড়ানোর জন্য এ তাওয়াফ ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিলম্বিত করা যেতে পারে। ১২ তারিখ সকালে তিনটি স্তম্ভে পাথর মেরে মিনা থেকে চূড়ান্তভাবে বিদায় হয়ে মক্কা শরিফে এসেও এ ফরজ তাওয়াফের সুযোগ রয়েছে। এর আগে করলে আবার পাথর মারার জন্য মিনায় ফিরে যেতে হবে।

১১ জিলহজের কাজ

শয়তানের উদ্দেশে তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে মোট ২১টি পাথর মারতে হবে।

১২ জিলহজের কাজ

তিনটি স্তম্ভে আবার সাতটি করে মোট ২১টি পাথর মারতে হবে। এভাবে পাথর মারার সংখ্যা হবে ১০ জিলহজ ৭টি+১১ জিলহজ ২১টি+১২ জিলহজ ২১টি = মোট ৪৯টি। তাওয়াফে জিয়ারত ১০ বা ১১ তারিখ না করলে এদিন অবশ্যই সূর্যাস্তের আগে সমাধা করতে হবে। ১১ ও ১২ তারিখে পাথর মারার সময় ছোট থেকে বড় স্তম্ভের দিকে যেতে হবে। ১২ তারিখের পর একজন হাজি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ১০ জিলহজ মাথা মুড়ানোর পরই ইহরাম অবস্থার অবসান হয়। তবে তাওয়াফে জিয়ারতের আগে স্ত্রী সহবাস জায়েয হবে না।

হজের আগে মদিনায় না গেলে এখন মদিনায় গিয়ে আট দিন অবস্থান করতে হবে এবং মসজিদে নববীতে  মোট ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, মদিনায় গমন করা হজের আহকামের অংশ নয়। তবে বিনা ওজরে বা কোনো সমস্যা ছাড়া মদিনা না যাওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বেয়াদবির নামান্তর। হজের পরে মক্কা শরিফে অবস্থান করলে তখন একাধিক উমরা করা যেতে পারে। হজ শেষ হওয়ার আগে বেশি উমরা না করাই উত্তম। কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে মূল হজই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিমান ছাড়ার দিন-ক্ষণ নির্দিষ্ট হয়ে গেলে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ করা। এটা একেবারে শেষ কাজ। এটা ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা সামর্থ্যবান মুসলমানদের হৃদয়ে হজ পালনের বাসনা জাগিয়ে তুলুন এবং আমাদেরকে হজব্রত পালনের তাওফিক দান করুন।

About Author Information

Md Rasel Mia

একাকিত্ব জীবন  জাপানে ৬ মাসে মৃত ৪০ হাজার বৃদ্ধ, বিচিত্র সংকটে উদীয়মান সূর্যের দেশ

হজ পালনের নিয়ম, কোন দিন কী করতে হবে   

সময়ঃ ১২:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার ;হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং মুসলমানদের বিশ্ব সম্মিলন। সামর্থ্যবানদের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। যাদের বায়তুল্লাহ শরিফে গমনাগমনের, হজের যাবতীয় খরচ বহনের এবং এই সময়ে পরিবারের ভরণ-পোষণের সামর্থ্য রয়েছে তাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে।

ইসরায়েলকে টার্গেট করে বড় ধরনের মিসাইল হামলা চালালো হামাস

হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির অন্যতম। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।’

হজের প্রকারভেদ

সম্পাদন পদ্ধতি অনুসারে হজ তিন প্রকার: (১) ইফরাদ, (২) কিরান ও (৩) তামাত্তু। শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পাদন হওয়ার পর ইহরাম ছাড়তে হবে।

একই ইহরামে হজ ও ওমরাহ একত্রে সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একত্রে ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে সেই ইহরামেই হজ সম্পাদন করে ১০ জিলহজ ইহরাম ছাড়তে হবে।
একইসফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফ ও সায়ি করে চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করতে হবে।

কিরান ও তামাত্তু হজে দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। অন্যথা ১০টি রোজা পালন করতে হবে, এর মধ্যে অন্তত তিনটি রাখতে হবে হজকালীন মক্কায়, তবে হজের বা আরাফাতের দিন ও কোরবানির ঈদের দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে।

হজের ফরজসমূহ

হজের ফরজ তিনটি: ১. ইরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা, ২. অকুফে আরাফা করা, ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা।

হজের ওয়াজিবসমূহ

হজের ওয়াজিব সাতটি: ১. আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামের স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা, ২. সাফা ও মারওয়া সায়ি করা বা দৌড়ানো, ৩. রমিয়ে জিমার বা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা, ৪. তামাত্তু ও কিরান হজে দমে শোকর বা কোরবানি করা, ৫. মাথার চুল মুড়িয়ে বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা, ৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা; ৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা। (আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)

হজের সুন্নতসমূহ

হজের সুন্নত ১০টি: ১. তাওয়াফে কুদুম বা প্রথম তাওয়াফ করা (ইফরাদ ও কিরান হজকারীর জন্য)। ২. তাওয়াফের সময় রমল করা (প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা)। ৩. খলিফা অথবা তাঁর প্রতিনিধি তিন দিন তিন স্থানে খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া। (৭ জিলহজ কাবা শরিফের হারাম শরিফে, ৯ জিলহজ আরাফায় মসজিদে নামিরাতে, ১১ জিলহজ মিনাতে।) ৪. আট জিলহজ মক্কা শরিফ থেকে মিনাতে গিয়ে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা। ৫. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া। ৬. অকুফে আরাফা বা আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে (দুপুরের পূর্বে) গোসল করা। ৭. ৯ জিলহজ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা। ৯. ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনাতে রাত যাপন করা। ১০. মিনা থেকে মক্কা শরিফ প্রত্যাবর্তনের সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামের জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।

বাংলাদেশিদের জন্য হজের ধারাবাহিক কাজ উল্লেখ করা হলো।

প্রাথমিক কাজ  

১. বিমানে আরোহণের আগে যথাযথ নিয়মে ইহরাম বাঁধা। ২. বিমান থেকে জিদ্দায় নেমে মক্কায় নির্দিষ্ট বাড়িতে বা অবস্থানে গিয়ে ব্যাগ রেখে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে অজু করে মুয়াল্লিমের মনোনীত লোকের সঙ্গে কাবাঘরে গমন। ৩. প্রাথমিক তাওয়াফ করা। সাতবার কাবা ঘরের চারদিকে ঘুরতে হবে। কাবাঘরের হাজরে আসওয়াদ যে কোণায় স্থাপিত সেখান থেকে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা। সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত ইশারা করে সে হাতের ওপর চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। ৪. সাত চক্করের প্রথম তিন চক্করে একটু দ্রুত চলে শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। এটাকে ‘রমল’ বলে। তাওয়াফের সময় পুরুষের গায়ের চাদর ডান হাতের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধে রাখতে হবে যেন ডান কাঁধ ও বাহু বের হয়ে থাকে। এটাকে ‘ইজতেবা’ বলে। এ দুটি তাওয়াফের সুন্নত যা তাওয়াফে জিয়ারতেও করতে হবে। অতিরিক্ত উমরার তাওয়াফেও তা করতে হয়। ৫. সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হবে সাতবার। শুরু করতে হবে সাফা থেকে, সপ্তমবার দৌড় শেষ হবে মারওয়ায়। ৬. এরপর মাথা মুড়াতে হবে বা চুল ছাটতে হবে। ৭. এরপরে মূল হজের কয়েক দিন বাকি থাকলে ইহরাম ছেড়ে স্বাভাবিক পোশাক পরা যাবে। মুয়াল্লিমের মনোনীত লোকের সঙ্গে মদিনায়ও যাওয়া যেতে পারে। মূল হজের আগে ইহরাম ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাকে হজ্জে তামাত্তু বলে। সাধারণত আমাদের দেশের হাজি সাহেবরা এ হজেরই নিয়ত করে থাকেন।

মূল কাজ

হজের মূল কাজ শুরু হয় ৮ জিলহজ, শেষ হয় ১২ জিলহজ। এ পাঁচ দিনের কাজগুলো সচেতনতার সঙ্গে যথার্থভাবে আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে চারটি ফরজ ও ওয়াজিবের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

৮ জিলহজের কাজ

এদিন নিজ কামরায় অথবা কাবাঘরে বসে হজের ইহরাম বেঁধে মক্কা শরিফ থেকে মুয়াল্লিমের ব্যবস্থাপনায় অথবা নিজস্ব উদ্যোগে (মুয়াল্লিম না থাকলে) ‘মিনায়’ (মক্কার কাছাকাছি একটি উপশহর) পৌঁছাতে হবে। সেখানে ওই দিন জোহর, আছর, মাগরিব, ইশা এবং পরের দিনের ফজর (মোট পাঁচ ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করতে হবে।

৯  জিল হজের কাজ
সকালে মিনা থেকে রওনা হয়ে আরাফাতের প্রান্তরে পৌঁছতে হবে। এখানে জোহর ও আছর একত্রে পড়তে হবে। খুতবার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত তালবিয়া, তাহমিদ, দোয়া-দরুদ, ইসতিগফার ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে।  সূর্যাস্তের পর মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হতে হবে। মাগরিবের ওয়াক্ত চলে গেলেও, রাত গভীর হলেও মুজদালিফায় পৌঁছার পরেই মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে পড়তে হবে। মাগরিবের ওয়াক্ত চলে যায় এ বিবেচনায় কোনোক্রমেই যাত্রাবিরতি করে মাগরিব পড়া যাবে না। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশা পড়াটাই হজের আহকাম। এ রাতে (৯ তারিখের দিবাগত রাত) মুজদালিফায় বিশ্রাম নিতে বা ঘুমাতে হবে। ফজর পড়ে সূর্যোদয়ের আগে আবার মিনার উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে। মুজদালিফা প্রান্তর থেকে ন্যূনতম ৪৯টি পাথর (ছোট) সঙ্গে আনতে হবে।

১০ জিলহজের কাজ

মুজদালিফা থেকে রওনা হয়ে মিনা পৌঁছতে হবে।  এদিন কেবল শয়তানের বড় স্তম্ভে (জামরাতে আকাবা) ৭টি পাথর মারতে হবে। অন্য স্তম্ভগুলোতে এদিন পাথর মারা যাবে না। (জামরাতে) পাথর মারার পর কুরবানির নির্দিষ্ট নিয়মে একটি কুরবানি করতে হবে। এদিন ক্ষতিপূরণমূলক কুরবানি (দম) করা যাবে এবং একাধিক নফল কুরবানি করারও সুযোগ রয়েছে।  কুরবানি করার পর মাথা মুড়াতে হবে অথবা চুল ছাঁটতে হবে। এদিন এসব কাজ সমাধা করার পর ফরজ তাওয়াফ বা তাওয়াফে জিয়ারত করতে হবে। অবশ্য ভিড় এড়ানোর জন্য এ তাওয়াফ ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিলম্বিত করা যেতে পারে। ১২ তারিখ সকালে তিনটি স্তম্ভে পাথর মেরে মিনা থেকে চূড়ান্তভাবে বিদায় হয়ে মক্কা শরিফে এসেও এ ফরজ তাওয়াফের সুযোগ রয়েছে। এর আগে করলে আবার পাথর মারার জন্য মিনায় ফিরে যেতে হবে।

১১ জিলহজের কাজ

শয়তানের উদ্দেশে তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে মোট ২১টি পাথর মারতে হবে।

১২ জিলহজের কাজ

তিনটি স্তম্ভে আবার সাতটি করে মোট ২১টি পাথর মারতে হবে। এভাবে পাথর মারার সংখ্যা হবে ১০ জিলহজ ৭টি+১১ জিলহজ ২১টি+১২ জিলহজ ২১টি = মোট ৪৯টি। তাওয়াফে জিয়ারত ১০ বা ১১ তারিখ না করলে এদিন অবশ্যই সূর্যাস্তের আগে সমাধা করতে হবে। ১১ ও ১২ তারিখে পাথর মারার সময় ছোট থেকে বড় স্তম্ভের দিকে যেতে হবে। ১২ তারিখের পর একজন হাজি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ১০ জিলহজ মাথা মুড়ানোর পরই ইহরাম অবস্থার অবসান হয়। তবে তাওয়াফে জিয়ারতের আগে স্ত্রী সহবাস জায়েয হবে না।

হজের আগে মদিনায় না গেলে এখন মদিনায় গিয়ে আট দিন অবস্থান করতে হবে এবং মসজিদে নববীতে  মোট ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, মদিনায় গমন করা হজের আহকামের অংশ নয়। তবে বিনা ওজরে বা কোনো সমস্যা ছাড়া মদিনা না যাওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বেয়াদবির নামান্তর। হজের পরে মক্কা শরিফে অবস্থান করলে তখন একাধিক উমরা করা যেতে পারে। হজ শেষ হওয়ার আগে বেশি উমরা না করাই উত্তম। কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে মূল হজই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিমান ছাড়ার দিন-ক্ষণ নির্দিষ্ট হয়ে গেলে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ করা। এটা একেবারে শেষ কাজ। এটা ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা সামর্থ্যবান মুসলমানদের হৃদয়ে হজ পালনের বাসনা জাগিয়ে তুলুন এবং আমাদেরকে হজব্রত পালনের তাওফিক দান করুন।