০৭:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নফল নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

  • Md Rasel Mia
  • সময়ঃ ০৫:২৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • ১১২ সময়

সালাতের আভিধানিক অর্থ হলো দোয়া, রহমত, ইস্তিগফার ইত্যাদি। ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল সা: বলেছেন, কুফরি এবং মুমিনের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। নামাজ আদায়ের বহু উপকারিতা ও ফজিলত রয়েছে যেমন : ১. আত্মিক ২. শারীরিক ৩. সামাজিক ৪. পারলৌকিক।

উপরে বর্ণিত সব ফজিলত ও উপকার নফল ও ফরজ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা মুসলমান। সেই হিসেবে আমাদের ফরজ নামাজ অবশ্যই পড়তে হয়। কিন্তু এমন কিছু নফল নামাজ আছে যা পড়লে উভয় জাহানে ব্যাপক কল্যাণ অর্জন করা যায়। রাসূল সা. বলেছেন, রমজান মাসের নফল নামাজ অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। নফল নামাজের ফজিলত অপরিসীম। নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আখিরাতে তাদের বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে। উম্মে হাবীবা রাযি. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন : ‘যে ব্যক্তি দিন রাতে ১২ রাকাত নামাজ (ফরজ ব্যতীত) আদায় করবে এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মিত হবে।’ (মুসলিমতিরমিজি)।

আর তা হচ্ছে জোহরের পূর্বে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত, ফজরের পূর্বে দুই রাকাত। বুখারি শরিফের হাদিসে নফল নামাজ আদায়কারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাদের প্রার্থনা যেমন কবুল করেন এবং তাদের আশ্রয়ও দেন। ‘নফল ইবাদত ব্যতীত বান্দা আলস্নাহ পাকের মহব্বত লাভ করতে পারে না।’ [বুখারী শরীফ]

সহীহ হাদীস দ্বারা যেসব নফল নামাজ সাব্যস্ত সেগুলোর মধ্যে ইশরাক, চাশ্ত, আওয়াবিন, তাহাজ্জুদ ও ছালাতুত্ তাসবীহের নামাজ অন্যতম। তাই দৈনন্দিন অজীফার মধ্যে প্রাথমিক সালেকদের এসব নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগীর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ পাকের মহব্বত ও নৈকট্য লাভ করা। আর এ উদ্দেশ্য নফল ইবাদত ও অজীফা আদায়ের মাধ্যমে অতি সহজেই লাভ করা সম্ভব হয়।

রাতের তৃতীয়াংশের ইবাদতের কথা কুরআন ও হাদিসে নির্দেশিত হয়েছে। এ সময় আল্লাহপাক বান্দার ডাকে অধিক সাড়া দেন। তিনি বান্দাকে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন, তাঁকে ডাকতে বলেন, তাঁর ইবাদত করে তাঁর নৈকট্যলাভের আহ্বান করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রসূল সা. বলেছেন- “আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের যখন শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, হে বান্দা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করব। আমার কাছে তোমার কি চাওয়া আছে, চাও, আমি তা দান করব। আমার কাছে তোমার জীবনের গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দেব।” (বুখারী : ৬৯৮৬)।

এভাবে মহান আল্লাহপাক ফজরের আগ পযন্ত তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন। সুতরাং এ সুবর্ণ সুযোগ নিদ্রায় না কাটিয়ে আমল-ইবাদতে কাটানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

দয়াময় প্রভু আমাদের ওপর কতই না রহম করেছেন! দাঁড়ানোর শক্তি থাকা সত্ত্বেও নফল সালাত বসে আদায় করা যায়। ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে”। অনুরূপ জায়েজ আছে সালাতের কিছু অংশ দাঁড়িয়ে পড়া ও কিছু অংশ বসে পড়া। হ্যাঁ ফরয নামাজের কিয়াম রোকন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে তা ত্যাগ করল, তার সালাত বাতিল।

এ সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সা. রাতের সালাত সম্পর্কে বলেন: ‘তিনি রাতে নয় রাকাত সালাত আদায় করতেন, তাতে বেতেরও রয়েছে। তিনি দীর্ঘ রাত দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন, আবার দীর্ঘ রাত বসে আদায় করতেন। তিনি যখন দাঁড়িয়ে পড়তেন, তখন রুকু-সেজদা দাঁড়িয়ে করতেন। আর যখন বসে পড়তেন, তখন রুকু-সেজদা বসে আদায় করতেন…”। তার থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সা. কখনো রাতের সালাতে বসে কুরআন পড়তে দেখিনি, যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন বসে তিলাওয়াত করেছেন, যখন সূরার ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকত, তিনি দাঁড়াতেন অতঃপর তা তিলাওয়াত করতেন, অতঃপর রুকু করতেন”।

নফল ইবাদত (নামাজ, রোযা, জিকর ও মোরাকাবা) সমূহের মধ্যে আল্লাহ পাকের নিকট সবচে’ প্রিয় বান্দার ঐ আমল যা সে সর্বদা চালু রাখে, যদিও পরিমাণে উহা কম হয়। [আল হাদীস]

 

About Author Information

Md Rasel Mia

জনপ্রিয় নিউজ

জানুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজের সব শিক্ষকের এমপিও ইএফটিতে

নফল নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সময়ঃ ০৫:২৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

সালাতের আভিধানিক অর্থ হলো দোয়া, রহমত, ইস্তিগফার ইত্যাদি। ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল সা: বলেছেন, কুফরি এবং মুমিনের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। নামাজ আদায়ের বহু উপকারিতা ও ফজিলত রয়েছে যেমন : ১. আত্মিক ২. শারীরিক ৩. সামাজিক ৪. পারলৌকিক।

উপরে বর্ণিত সব ফজিলত ও উপকার নফল ও ফরজ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা মুসলমান। সেই হিসেবে আমাদের ফরজ নামাজ অবশ্যই পড়তে হয়। কিন্তু এমন কিছু নফল নামাজ আছে যা পড়লে উভয় জাহানে ব্যাপক কল্যাণ অর্জন করা যায়। রাসূল সা. বলেছেন, রমজান মাসের নফল নামাজ অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। নফল নামাজের ফজিলত অপরিসীম। নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আখিরাতে তাদের বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে। উম্মে হাবীবা রাযি. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন : ‘যে ব্যক্তি দিন রাতে ১২ রাকাত নামাজ (ফরজ ব্যতীত) আদায় করবে এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মিত হবে।’ (মুসলিমতিরমিজি)।

আর তা হচ্ছে জোহরের পূর্বে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত, ফজরের পূর্বে দুই রাকাত। বুখারি শরিফের হাদিসে নফল নামাজ আদায়কারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাদের প্রার্থনা যেমন কবুল করেন এবং তাদের আশ্রয়ও দেন। ‘নফল ইবাদত ব্যতীত বান্দা আলস্নাহ পাকের মহব্বত লাভ করতে পারে না।’ [বুখারী শরীফ]

সহীহ হাদীস দ্বারা যেসব নফল নামাজ সাব্যস্ত সেগুলোর মধ্যে ইশরাক, চাশ্ত, আওয়াবিন, তাহাজ্জুদ ও ছালাতুত্ তাসবীহের নামাজ অন্যতম। তাই দৈনন্দিন অজীফার মধ্যে প্রাথমিক সালেকদের এসব নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগীর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ পাকের মহব্বত ও নৈকট্য লাভ করা। আর এ উদ্দেশ্য নফল ইবাদত ও অজীফা আদায়ের মাধ্যমে অতি সহজেই লাভ করা সম্ভব হয়।

রাতের তৃতীয়াংশের ইবাদতের কথা কুরআন ও হাদিসে নির্দেশিত হয়েছে। এ সময় আল্লাহপাক বান্দার ডাকে অধিক সাড়া দেন। তিনি বান্দাকে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন, তাঁকে ডাকতে বলেন, তাঁর ইবাদত করে তাঁর নৈকট্যলাভের আহ্বান করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রসূল সা. বলেছেন- “আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের যখন শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, হে বান্দা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করব। আমার কাছে তোমার কি চাওয়া আছে, চাও, আমি তা দান করব। আমার কাছে তোমার জীবনের গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দেব।” (বুখারী : ৬৯৮৬)।

এভাবে মহান আল্লাহপাক ফজরের আগ পযন্ত তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন। সুতরাং এ সুবর্ণ সুযোগ নিদ্রায় না কাটিয়ে আমল-ইবাদতে কাটানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

দয়াময় প্রভু আমাদের ওপর কতই না রহম করেছেন! দাঁড়ানোর শক্তি থাকা সত্ত্বেও নফল সালাত বসে আদায় করা যায়। ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে”। অনুরূপ জায়েজ আছে সালাতের কিছু অংশ দাঁড়িয়ে পড়া ও কিছু অংশ বসে পড়া। হ্যাঁ ফরয নামাজের কিয়াম রোকন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে তা ত্যাগ করল, তার সালাত বাতিল।

এ সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সা. রাতের সালাত সম্পর্কে বলেন: ‘তিনি রাতে নয় রাকাত সালাত আদায় করতেন, তাতে বেতেরও রয়েছে। তিনি দীর্ঘ রাত দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন, আবার দীর্ঘ রাত বসে আদায় করতেন। তিনি যখন দাঁড়িয়ে পড়তেন, তখন রুকু-সেজদা দাঁড়িয়ে করতেন। আর যখন বসে পড়তেন, তখন রুকু-সেজদা বসে আদায় করতেন…”। তার থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সা. কখনো রাতের সালাতে বসে কুরআন পড়তে দেখিনি, যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন বসে তিলাওয়াত করেছেন, যখন সূরার ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকত, তিনি দাঁড়াতেন অতঃপর তা তিলাওয়াত করতেন, অতঃপর রুকু করতেন”।

নফল ইবাদত (নামাজ, রোযা, জিকর ও মোরাকাবা) সমূহের মধ্যে আল্লাহ পাকের নিকট সবচে’ প্রিয় বান্দার ঐ আমল যা সে সর্বদা চালু রাখে, যদিও পরিমাণে উহা কম হয়। [আল হাদীস]