ডেস্ক রিপোর্ট : আত্মগোপনে থাকা দলের এক শীর্ষ নেতাকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন দিলেন পাকিস্তানের কারাবন্দি রাজনীতিবিদ ইমরান খান। তার নাম ওমর আইয়ুব খান। বিপক্ষ জোটের প্রার্থী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।
জানা যায়, পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ-পিটিআই এর জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদ কায়সার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কারাগারে দেখা করেন। বেরিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ইমরান খানের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ওমর আইয়ুব খানের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
ওমর আইয়ুব খান বর্তমানে পিটিআই’র সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি মোহাম্মদ আইয়ুব খানের নাতি। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত ১০ বছর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন আইয়ুব খান। তিনি সেনা প্রধান থেকে স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হয়েছিলেন।
পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি ওমর আইয়ুব খান। ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে তাকে খুঁজছে পুলিশ।
অবশ্য এতে তার সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ যেমন বাধাগ্রস্ত হয়নি তেমনি প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে না।
গত বছরের মে মাসে ইমরান খানের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছিলো পকিস্তানে। সেই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় আইয়ুবের বিরুদ্ধে। ফলে একরকম পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
এর মধ্যেই পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তানের নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন দলটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা।
সম্প্রতি এক এক্স (টুইটার) পোস্টে ওমর আইয়ুব খান বলেন, “আমাদের জনসমর্থনকে চুরি করে নিতে দেবো না।”
“রাজনৈতিক দল হিসেবে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাবে পিটিআই। যাতে দেশের অর্থনীতিকে একটা ইতিবাচক পথে নিয়ে আসা যায় এবং জনগণের ভালোর জন্য পুনর্গঠনমূলক বিভিন্ন উদ্যোগ চালু করা যায়।”
যদি প্রধানমন্ত্রী হন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্ত করা হবে তার প্রথম লক্ষ্য, জানান মি. খান।
২০০২ সালে প্রথম জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ওমর আইয়ুব। পিএমএল-এন ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কিউ’র টিকিটে সেবার নির্বাচন করেছিলেন তিনি।
২০১২ সালে পিএমএল-এন এ যোগ দেন। ২০১৮ সালে আসেন পিটিআইয়ে। ইমরান খানের মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন তিনি।
ইমরান খান প্রথম দফায় গ্রেফতার হওয়ার কিছু দিনের মাথায় ২০২৩ সালে ২৭ মে তাকে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত করা হয়।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ সদস্যরা দ্রুতই নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। যেখানে ৫৬ বছর বয়সী ওমর আইযুব খান পিএমএল-এন এর শেহবাজ শরিফের বিপক্ষে লড়বেন। নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শেহবাজ পিএমএল-এন ও পিপিপি জোটের পক্ষ থেকে মনোনীত হয়েছেন।
ইমরান খানের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অপ্রত্যাশিতভাবে বেশিরভাগ আসন জিতেছে ঠিকই, কিন্তু সেটি সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
বরং দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ- এন এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপল’স পার্টি জোট গঠনের পর পরিস্থিতি এখন অনেকটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে।
পিপিপি’র সমর্থন নিয়ে নওয়াজ শরিফ পিএমএল-এন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তার ভাই শেহবাজকে সামনে নিয়ে আসেন।
পাকিস্তানে আট ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের ২৬৫টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৯৩টিতে জেতেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নিকটতম অবস্থানে ছিল পিএমএল-এন। ৭৫টি আসন দখলে রাখতে সমর্থ হয় তারা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পিপিপির ঘরে যায় ৫৪টি আসন।
ভোটে কারচুপি ও বাধা দেয়ার অভিযোগ তোলেন পিটিআই নেতারা। দাবি করেন, তাদের প্রার্থীরা আরো বেশি আসন পাওয়ার কথা। জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেন নির্বাচনি কর্মকর্তারা।
এই সপ্তাহের শুরুতে, জামায়াত-ই-ইসলামি’র একজন রাজনীতিবিদ তার জয় পাওয়া আসন ছেড়ে দেন। তার দাবি, জাল ভোট দিয়ে তাকে জিতিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় পরিষদের সব সদস্যের শপথ নেয়ার পর স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা হবে। তারপর হবে প্রধানমন্ত্রী পদের ভোট।
তখনই নিশ্চিত হবে কে হচ্ছেন পাকিস্তানের আগামী দিনের সরকারপ্রধান।