ডেস্ক রিপোর্ট :বেসরকারি মেডিকেল/ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতে গেলে সরকারের নির্দিষ্ট ১০ টি শর্ত মানতে হবে।
লাইসেন্সধারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া ডাক্তারের চেম্বার বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেস্থেসিয়া দেয়া এবং বিএমডিসির স্বীকৃত অবেদনবিদ (অ্যানেস্থেসিয়ালজিস্ট) ছাড়া যে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করা যে নিষিদ্ধ তা দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে মনে করিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খতনা করাতে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করার পর শিশুর মৃত্যুর দুটি ঘটনার পর বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশে এসব নির্দেশনা দেয়া হলো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, “এখন থেকে সরকারের নির্দিষ্ট ১০ টি শর্ত অমান্য করে বেসরকারি মেডিকেল/ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালালে সেটির নিবন্ধন বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
মঙ্গলবার ঢাকার মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনা করাতে এসে মারা যায় ১০ বছরের শিশু আহনাফ তাহমিন আয়হাম। ওই ঘটনায় বুধবার ক্লিনিকের দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের রোগ নির্ণয়ের অনুমোদন থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেয়ার অনুমোদন ছিলো না।
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার জন্য অজ্ঞান করা হয়েছিলো শিশু আয়ান আহমেদকে। খতনা করানোর পর ১১ ঘণ্টায়ও তার সংজ্ঞা না ফিরলে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে এনে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। সাত দিন সেখানে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি আয়ানকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ইউনাইটেড মেডিকেলও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিল যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই।
বুধবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাত বছরের শিশু আল নাহিয়ানের খতনা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত কেটে ফেলা ও রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার দায়ে দুই জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো আদেশে বলা হয়েছে–
- বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এর লাইসেন্সের কপি প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশ পথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে।
- সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িতপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা/কর্মচারী থাকতে হবে এবং তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।
- যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে, কিন্তু শুধু ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে, তারা যথাযথ লাইসেন্স ছাড়া কোনেভাবেই সেই সেবা দিতে পারবে না।
- ডায়াগনস্টিক সেন্টার/প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে যে ক্যাটারগরিতে লাইসেন্স রয়েছে, কেবল সেই ক্যাটাররিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না এবং ক্যাটারগরি অনুযায়ী প্যাথলজি/মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে।
- বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রকারভেদ ও শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী সকল শর্ত বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিযোজিত সকল চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।
- হাসপাতাল/ক্লিনিক এর ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/প্রসিডিউরের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড একজন চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে।
- লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া যাবে না। বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ ছাড়া কোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/ প্রসিডিউর করা যাবে না।
- সকল বেসরকারি নিবন্ধিত/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে লেবার রুম প্রটোকল মেনে চলতে হবে।
- নিবন্ধিত/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার কক্ষের আচরণবিধি মেনে চলতে হবে