স্টাফ রিপোর্টার :প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার ১০৩ বছর পেরিয়ে ১০৪ বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১৯২১ সালের আজকের এই দিনে ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। সে-সময় ছিল ৩টি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ।
তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা-এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হবে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
১৯২১ সালের ১ জুলাই পূর্ববঙ্গের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বঙ্গভঙ্গের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দীর্ঘ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রাচীনতম এ বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।
নানা বিরোধিতা-প্রতিকূলতা এড়িয়ে গড়ে ওঠা এ অঞ্চলের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের জ্ঞানচর্চার বাতিঘর হিসেবে শত বছর ধরে জ্বালিয়ে চলেছে জ্ঞানের মশাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকদের বড় অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পড়িয়েছেন।
এ প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই এই দেশের জনগোষ্ঠী উচ্চশিক্ষার পথে হেঁটেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনের সূচনা ও বেগবান করেছে এবং দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চিন্তা ও সক্রিয়তার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সব জনআন্দোলন ও সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। এখনো মুক্তচিন্তার বিকাশ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয়।
১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে লাল-নীল-সাদা-হলুদ-সবুজসহ নানা রঙের নিভু-নিভু বাতির সজ্জায় সেজেছে ঢাবি। রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, উপাচার্য বাংলো, মলচত্বর, কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কার্জন হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা বর্ণিল সাজে সেজেছে।
অন্যান্য দিনের তুলনায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগত দর্শনার্থীদের আনাগোনাও ছিল বেশ। যদিও তুলনামূলকভাবে কার্জন হলে আনাগোনা অন্য স্থপনাগুলের চেয়ে বেশি। ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ; আংশিকভাবে মুসলিম স্থাপত্যরীতিও অনুসরণে ভবনের বহির্পৃষ্ঠে কালচে লাল রঙের ইট ব্যবহারে তৈরি কার্জন আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে আলোকসজ্জাতে।
প্রতিষ্ঠাকালীন তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল ৬০ জন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্রছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ১৫০ জন। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৮ শিক্ষক।