০১:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ পহেলা বৈশাখ

  • সময়ঃ ১১:২৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪
  • ২৫ সময়

স্টাফ রিপোর্টার : এসো হবে বৈশাখ।  আজ পয়লা বৈশাখ, বাংলা সনের প্রথম দিন। স্বাগতম ১৪৩১ বাংলা নববর্ষ! শিশু-যুবা-বৃদ্ধসহ সব বয়সের এবং সব শ্রেণীর মানুষ এ দিনটি উদযাপন করে। বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। নববর্ষ উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ হয়েছে। দিনটি উদযাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলা নববর্ষ উদযাপন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির একটি অন্যতম উপাদান। এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে গ্রাম-গঞ্জে বৈশাখী মেলা বসে। এ মেলায় কৃষিজ পণ্য, কুঠির শিল্প দ্রব্য, মৃৎ ও হস্তশিল্প দ্রব্য প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, খেলনা ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম পড়ে। আগের দিনে মেলায় ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, বলীখেলা ইত্যাদি বিনোদন অনুষ্ঠান প্রদর্শনী হতো। তখন মেলা ছিল বাঙালির প্রাণের উৎস। মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা হতো। আর বিবাহিতা মেয়েরা বাপের বাড়িতে নাইওর যেত। আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই মেলায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠত। আগের দিনে মেলার সময় বাংলার গ্রামে গ্রামে আনন্দের ধুম বয়ে যেত। মেলায় লাঙল, জোয়াল, মইসহ বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জামাদি, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, শিশুদের খেলাধুলার জন্য ঘুড়ি, মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া ইত্যাদি বেচা-কেনা হতো। মেয়েদের হাতের চুড়ি, কানের দুল, গলার হার, প্রসাধনী সামগ্রীও মেলায় বেচাকেনা হতো। এ ছাড়া জুড়ি-বুন্দি, জিলাপি, রসগোল্লা ইত্যাদি মুখরোচক খাবারের সমারোহ তো ছিলই। তবে সব মেলা নববর্ষ উপলক্ষে পয়লা বৈশাখে কিংবা একই দিনে হতো না বরং চৈত্র সংক্রান্তি, বারুনিসহ বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সময়ে হতো। নববর্ষ উপলক্ষে আমানি, রাজপুণ্যাহ, হালখাতা, গাজনের গান ইত্যাদি গ্রামীণ অনুষ্ঠান মাসজুড়ে চলত।

বাংলা সনের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। তাই স্বাভাবিক কারণেই বাংলা নববর্ষের উৎসব-সংস্কৃতিও খুব পুরনো নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু লোক বাংলা নববর্ষে সেন যুগীয় (খ্রিষ্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকের) ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিকে বাংলা নববর্ষের সংস্কৃতি বলে অপপ্রচার করছে। আর এ অপপ্রচারের ফাঁদে পড়ে সহজ-সরল অনেক বাঙালি ঐসব অপসংস্কৃতিকেই বাংলা নববর্ষের সংস্কৃতি হিসেবে পালন করছে। মুসলিম আমলের (১২০৩-১৭৫৭ খ্রি.) বাংলা সাহিত্যে বাংলা নববর্ষভিত্তিক কোনো সাহিত্য নেই। ইংরেজ আমলের (১৭৫৭-১৯৪৭ খি.) সাহিত্যেও বাংলা নববর্ষভিত্তিক কোনো রচনা পাওয়া যায় না। বিশ শতকের প্রথমার্ধেও বাংলা ‘নববর্ষ’ সাহিত্যে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে নাই। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা-গানে ‘বৈশাখ’ ‘পুণ্যাহ’ বিষয় থাকলেও বাংলা ‘বর্ষবরণ’ উৎসবের বিষয় নাই। একইভাবে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যে পারস্যের ‘নওরোজ’ অনুষ্ঠানের উল্লেখ থাকলেও বাংলা ‘নববর্ষ’ বা বর্ষবরণ’ উদযাপনের বিষয় নাই। অর্থাৎ গত শতাব্দীর প্রথমার্ধের বাংলা সাহিত্যে ‘নববর্ষ উৎসব’ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। অবশ্য তখন যে ‘নববর্ষ’ বা ‘বর্ষবরণ’ ছিল না বিষয়টি তেমন না।

তবে তৎকালে ‘বর্ষবরণ’ বা ‘নববর্ষ’ উদযাপন ছিল অনাড়ম্ভরপূর্ণ ও জৌলুশহীন। ঘরোয়া পরিবেশে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই নতুন বছরের প্রথম দিনে ভালো খাবার আয়োজন-আপ্যায়ন এবং নতুন পোশাক পরার ‘বর্ষবরণ’ বা ‘নববর্ষ’ উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানের মতো এত জমকালো অনুষ্ঠান তৎকালে ছিল না। মিষ্টান্ন বা মিঠা জাতীয় দ্রব্য দিয়ে ‘মিঠামুখ’ করানো এবং অপেক্ষাকৃত ভালো খাবারের আয়োজন করা হতো ‘বর্ষবরণ’ বা ‘নববর্ষ’ দিনে। তৎকালীন বাঙালি সমাজে প্রচলিত ধারণা ছিল বছরের শুরুর দিন ‘মিঠামুখ’ করলে সারা বছর মুখ মিঠা থাকবে এবং এদিন ভালো খাবার খেলে সারা বছর অনুরূপভাবে ভালো খাবার খাওয়া যাবে। কুসংস্কার হলেও বাঙালিরা এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে ‘নববষর্’ দিনে অপেক্ষাকৃত ভালো খাবারের আয়োজন ও ভালো পোশাক পরিধান করে। কালের পরিক্রমায় বছরের প্রথম দিনে ভালো খাবারের আয়োজন-আপ্যায়ন, নতুন পোশাক পরা, হিন্দুদের পূজা-অর্চনা, মুসলমানদের মিলাদ-মাহফিল-দোয়া অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা ‘নববর্ষ’ ‘বর্ষবরণ’ উদযাপনের উৎপত্তি ঘটে। আর ইংরেজ শাসনামল অবসানের পর কালক্রমে ‘নববর্ষ’ উদযাপন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও তৎপরবর্তীকালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলা ‘নববর্ষ’ উদযাপনকে ত্বরান্বিত ও বিস্তৃত করেছে।

About Author Information

জনপ্রিয় নিউজ

রাত ১১টার মধ্যে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির

আজ পহেলা বৈশাখ

সময়ঃ ১১:২৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : এসো হবে বৈশাখ।  আজ পয়লা বৈশাখ, বাংলা সনের প্রথম দিন। স্বাগতম ১৪৩১ বাংলা নববর্ষ! শিশু-যুবা-বৃদ্ধসহ সব বয়সের এবং সব শ্রেণীর মানুষ এ দিনটি উদযাপন করে। বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। নববর্ষ উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ হয়েছে। দিনটি উদযাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলা নববর্ষ উদযাপন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির একটি অন্যতম উপাদান। এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে গ্রাম-গঞ্জে বৈশাখী মেলা বসে। এ মেলায় কৃষিজ পণ্য, কুঠির শিল্প দ্রব্য, মৃৎ ও হস্তশিল্প দ্রব্য প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, খেলনা ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম পড়ে। আগের দিনে মেলায় ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, বলীখেলা ইত্যাদি বিনোদন অনুষ্ঠান প্রদর্শনী হতো। তখন মেলা ছিল বাঙালির প্রাণের উৎস। মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা হতো। আর বিবাহিতা মেয়েরা বাপের বাড়িতে নাইওর যেত। আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই মেলায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠত। আগের দিনে মেলার সময় বাংলার গ্রামে গ্রামে আনন্দের ধুম বয়ে যেত। মেলায় লাঙল, জোয়াল, মইসহ বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জামাদি, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, শিশুদের খেলাধুলার জন্য ঘুড়ি, মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া ইত্যাদি বেচা-কেনা হতো। মেয়েদের হাতের চুড়ি, কানের দুল, গলার হার, প্রসাধনী সামগ্রীও মেলায় বেচাকেনা হতো। এ ছাড়া জুড়ি-বুন্দি, জিলাপি, রসগোল্লা ইত্যাদি মুখরোচক খাবারের সমারোহ তো ছিলই। তবে সব মেলা নববর্ষ উপলক্ষে পয়লা বৈশাখে কিংবা একই দিনে হতো না বরং চৈত্র সংক্রান্তি, বারুনিসহ বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সময়ে হতো। নববর্ষ উপলক্ষে আমানি, রাজপুণ্যাহ, হালখাতা, গাজনের গান ইত্যাদি গ্রামীণ অনুষ্ঠান মাসজুড়ে চলত।

বাংলা সনের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। তাই স্বাভাবিক কারণেই বাংলা নববর্ষের উৎসব-সংস্কৃতিও খুব পুরনো নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু লোক বাংলা নববর্ষে সেন যুগীয় (খ্রিষ্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকের) ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিকে বাংলা নববর্ষের সংস্কৃতি বলে অপপ্রচার করছে। আর এ অপপ্রচারের ফাঁদে পড়ে সহজ-সরল অনেক বাঙালি ঐসব অপসংস্কৃতিকেই বাংলা নববর্ষের সংস্কৃতি হিসেবে পালন করছে। মুসলিম আমলের (১২০৩-১৭৫৭ খ্রি.) বাংলা সাহিত্যে বাংলা নববর্ষভিত্তিক কোনো সাহিত্য নেই। ইংরেজ আমলের (১৭৫৭-১৯৪৭ খি.) সাহিত্যেও বাংলা নববর্ষভিত্তিক কোনো রচনা পাওয়া যায় না। বিশ শতকের প্রথমার্ধেও বাংলা ‘নববর্ষ’ সাহিত্যে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে নাই। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা-গানে ‘বৈশাখ’ ‘পুণ্যাহ’ বিষয় থাকলেও বাংলা ‘বর্ষবরণ’ উৎসবের বিষয় নাই। একইভাবে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যে পারস্যের ‘নওরোজ’ অনুষ্ঠানের উল্লেখ থাকলেও বাংলা ‘নববর্ষ’ বা বর্ষবরণ’ উদযাপনের বিষয় নাই। অর্থাৎ গত শতাব্দীর প্রথমার্ধের বাংলা সাহিত্যে ‘নববর্ষ উৎসব’ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। অবশ্য তখন যে ‘নববর্ষ’ বা ‘বর্ষবরণ’ ছিল না বিষয়টি তেমন না।

তবে তৎকালে ‘বর্ষবরণ’ বা ‘নববর্ষ’ উদযাপন ছিল অনাড়ম্ভরপূর্ণ ও জৌলুশহীন। ঘরোয়া পরিবেশে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই নতুন বছরের প্রথম দিনে ভালো খাবার আয়োজন-আপ্যায়ন এবং নতুন পোশাক পরার ‘বর্ষবরণ’ বা ‘নববর্ষ’ উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানের মতো এত জমকালো অনুষ্ঠান তৎকালে ছিল না। মিষ্টান্ন বা মিঠা জাতীয় দ্রব্য দিয়ে ‘মিঠামুখ’ করানো এবং অপেক্ষাকৃত ভালো খাবারের আয়োজন করা হতো ‘বর্ষবরণ’ বা ‘নববর্ষ’ দিনে। তৎকালীন বাঙালি সমাজে প্রচলিত ধারণা ছিল বছরের শুরুর দিন ‘মিঠামুখ’ করলে সারা বছর মুখ মিঠা থাকবে এবং এদিন ভালো খাবার খেলে সারা বছর অনুরূপভাবে ভালো খাবার খাওয়া যাবে। কুসংস্কার হলেও বাঙালিরা এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে ‘নববষর্’ দিনে অপেক্ষাকৃত ভালো খাবারের আয়োজন ও ভালো পোশাক পরিধান করে। কালের পরিক্রমায় বছরের প্রথম দিনে ভালো খাবারের আয়োজন-আপ্যায়ন, নতুন পোশাক পরা, হিন্দুদের পূজা-অর্চনা, মুসলমানদের মিলাদ-মাহফিল-দোয়া অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা ‘নববর্ষ’ ‘বর্ষবরণ’ উদযাপনের উৎপত্তি ঘটে। আর ইংরেজ শাসনামল অবসানের পর কালক্রমে ‘নববর্ষ’ উদযাপন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও তৎপরবর্তীকালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলা ‘নববর্ষ’ উদযাপনকে ত্বরান্বিত ও বিস্তৃত করেছে।